মহসীন শেখ, কক্সবাজার :: কক্সবাজার শহরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান ১০টি অবৈধ সিএনজি স্টেশন। এসব স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে চলছে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি। আর এসব সিএনজি-টেম্পু থেকে ২ হাজার থেকে ২৮শত টাকা করে ট্রাফিক পুলিশ এবং একটি সমিতির নামে প্রায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মাসোহারা ছাড়াও সিএনজি প্রতি দৈনিক ৫০টাকা করে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন সিএনজি চালকরা। এতে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শহর ও শহরতলীবাসী। যানজটের কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও নিত্তদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর লিংকরোড় থেকে লালদীঘির পাড় থেকে শুরু করে কলাতলী পর্যন্ত ১০টি অবৈধ সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে প্রতিদিন চলছে দেড় হাজারেরও বেশি রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সিএনজি মালিক এবং চালকরা জানান, কথিত ওই সমিতি নেতা পরিচয়ে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে গুরত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করছে। কথিত এই নেতাদের সাথে মাসিক চুক্তি করলেই তাদের দস্তখত সম্বলিত কিছু কার্ড দেন। আর ওই কার্ড দেখালে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজিগুলো ট্রাফিক পুলিশ অথবা অন্য যে কারো ঝামেলা ছাড়াই পুরো জেলায় গাড়ি চালানো যায়। তবে চুক্তিবিহীন সিএনজির রেজিষ্ট্রেশন অথবা ফিটনেস ঠিক থাকলেও পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয়।
সূত্র জানায়, করিমের নেতৃত্বে শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পৌরসভার সামনের কোর্ট বিল্ডিং সড়কে একটি(কক্সবাজার থেকে টেকনাফ), জেলার কেন্দ্রীয় বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম, কেন্দ্রীয় ঈদগাঁহ ময়দান, পৌর প্রিপ্যার্যাটরী উচ্চ বিদ্যালয়, টেনিস কোর্ট, বক্ষব্যধি হসপিটাল, জেলা সদর হাসপাতাল সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় জনৈক কবিরের নেতৃত্বে বিশাল একটি সিএনজি অবৈধ স্টেশন(টেকনাফ লাইন) গড়ে উঠেছে, একইভাবে ওই সমিতির নেতা নামধারী কলাতলী আদর্শগ্রামের বাসিন্দা লাইনম্যান নজিবুল হক বাবু ও মৌলভী নুরুল ইমলামের তত্ববধানে কলাতলী মোড়ে রয়েছে একটি সিএনজি স্টেশন, আমান উল্লাহ ও নুরুল হকের নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ততম বড় বাজার(পৌর সুপার মার্কেটের উভয় পাশের সরু রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে প্রায় তিনটি স্টেশন, শহরের লালদীঘির পাড়ে প্যানোয় সড়কে জলিলের নেতৃত্বে টেকনাফ-শাপলাপুর কেন্দ্রীক একটি সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্পকে ঘিরে স্টেশনের দায়িত্বে রয়েছেন জলিল, জাকিরিয়ার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও আম্বুলোর নিয়ন্ত্রণ করছে লিংকরোড়ের অবৈধ সিএনজি স্টেশন।
কক্সবাজার জেলা অটোরিক্সা-সিএনজি-টেম্পু শ্রমিক(১৪৯১) ইউনিয়নের সভাপতি জিন্নাত আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তাদের সমিতির নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে বলেন, “আমাদের সমিতিতে কলঙ্কিত করতেই কিছু ব্যক্তি নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছে। মূলত আমাদের সমিতির নামে সিএনজি প্রতি মাত্র ১০টাকা করে নেওয়া হয়।
কক্সবাজারের অন্যতম সামাজিক সংগঠন “আমার কক্সবাজারবাসী’র” সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ সিএনজি স্টেশন। ফলে শরহজুড়ে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই আছে। অব্যাহত যানজটের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থী, সরকারী বেসরকারী কর্মজীবি মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখিন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে সিএনজি স্টেশনগুলোর কবলে সাধারণ পথচারীদের চলাচলের জন্য থাকা ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সড়ক দূর্ঘটনা নৈত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়েছে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি যানজটের কারণে রুগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু ওসব সিএনজি স্টেশনে থাকা সিএনজিগুলোর একটিরও রেজিষ্ট্রেশন নেই। এরপর ট্রাফিক পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ এসব সিএনজি স্টেশন থাকলেও রহস্যজনকভাবে তা উচ্ছেদ না করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল বণিক ট্রাফিক পুলিশের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, যদি ট্রাফিক পুলিশের নামে সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে তাহলে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেলে তাদে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শহর ও শহরতলী জুড়ে অবৈধ ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশনগুলোতে মাসিক চুক্তিতে দেড় হাজারেরও বেশি রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি কিভাবে চলে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ প্রতিদিনই রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আশরাফুল আফসার বলেন, যানজট মুক্ত করতে অতি দ্রুত এসব সিএনজি স্টেশন সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: